ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

থাইল্যান্ডে পুরুষাঙ্গ ‘ফর্সা’ করার এই ঝোঁক কেন?

বিবিসি বাংলা :

গায়ের রঙ ফর্সা করার চেষ্টা এশিয়ার দেশগুলোতে নতুন কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু থাইল্যান্ডের কিছু পুরুষ যেভাবে তাদের পুরুষাঙ্গ ‘ফর্সা’ করার চেষ্টা করছেন, তা শুনে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, দেশটির ‘বিউটি ইন্ডাষ্ট্রি’ আসলে সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে কীনা।

দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এখনো ‘ফর্সা’ বা ‘উজ্জ্বল’ গায়ের রঙকে কালো বা শ্যামলা রঙের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের বেলায় তাদের গায়ের রঙ সৌন্দর্য্যের অন্যতম মাপকাঠি বলে বিবেচিত হয়।

থাইল্যান্ডেও গায়ের রঙ ফর্সা করার প্রবণতা দেখা যায় অনেক নারী-পুরুষের মধ্যে। কিন্তু ‘পুরুষাঙ্গ’ ফর্সা করার চেষ্টার কথা জানা গেলো এই প্রথম।

একটি থাই হাসপাতাল অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল কিভাবে তারা পুরুষাঙ্গ ফর্সা করার কাজটি করে। এই ভাইরাল ভিডিওটি এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের সোশ্যাল মিডিয়া টাইমলাইনে।

থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এভাবে ‘লেজার রশ্মি’ ব্যবহার করে পুরুষাঙ্গ ‘ফর্সা’ করার চেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্কবাণী দিয়েছে।

কেন এই ঝোঁক

এভাবে পুরুষাঙ্গ ফর্সা করেছেন এমন একজনের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসির থাই সার্ভিস।

তিনি এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, সুইমিং কস্টিউম পরে তিনি যখন সাঁতারে যান, তখন তিনি আরও বেশি ‘আত্মবিশ্বাসী’ বোধ করতে চান।

তিরিশ বছর বয়সী এই ব্যক্তি দুই মাস আগে প্রথম পুরুষাঙ্গ ফর্সা করতে একটি ক্লিনিকে যান। তিনি দাবি করছেন, তার পুরুষাঙ্গটির রঙ ইতোমধ্যে নিশ্চিতভাবেই ফর্সা হতে শুরু করেছে।

মূলত লেজার রশ্মি ব্যবহার করে এই কাজটি করা হয়। মানুষের ত্বকে যে মেলানিন থাকে, লেজার দিয়ে সেটি ধ্বংস করা হয়।

যে ক্লিনিকটি এই পুরুষাঙ্গ ফর্সা করার এই ‘চিকিৎসা’ দিচ্ছে, তারা ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে এই পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করেছিল। পোস্টটি দুদিনেই ১৯ হাজার বার শেয়ার হয়েছে।

সেখানে ‘চিকিৎসার আগে’ এবং ‘চিকিৎসার পরের’ ছবিও দেয়া আছে।

ফেসবুকে এই পোস্টের নীচে নানা রকম মন্তব্য করেছেন অনেকে। বেশিরভাগেরই প্রশ্ন, ‘এটা করতে হবে কেন?’। তবে কেউ কেউ এই প্রশ্নের মজার উত্তরও দিয়েছেন। একজন লিখেছেন, “এর ফলে এটিকে টর্চলাইট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এটি উজ্জ্বল হয়ে উঠুক।”

অবশ্য পুরুষাঙ্গ ফর্সা করার এই প্রবণতাকে নাকচ করে দিয়ে একজন নারী লিখেছেন, রঙ কালো না ফর্সা তা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন।

থাইল্যান্ডের লেক্সাস হাসপাতাল অবশ্য পুরুষাঙ্গ নয়, মেয়েদের যৌনাঙ্গ ফর্সা করার সার্ভিসটাই আগে শুরু করেছিল।

হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার পপল টানসাকুল বিবিসিকে জানান, চার মাস আগে তারা মেয়েদের যৌনাঙ্গ ফর্সা করার সার্ভিস শুরু করেন। “এরপর অনেকে আমাদের কাছে জানতে চান, পুরুষাঙ্গ ফর্সা করার সার্ভিস পাওয়া যাবে কিনা। কাজেই এরপর আমরা সেটাও চালু করেছি।”

তিনি জানান, যৌনাঙ্গের রঙ ফর্সা করতে পাঁচটি সেশনের জন্য খরচ পড়ে সাড়ে ছয়শো মার্কিন ডলারের মতো। গড়ে মাসে বিশ-তিরিশ জন ‘রোগী’ তাদের কাছে এই সেবা নিতে আসেন। কম্বোডিয়া, মিয়ানমার এবং ফিলিপাইন থেকেও অনেকে এই সেবা নিতে আসেন।

মিস্টার পপল জানান, “বিশেষ করে সমকামী এবং ‘ট্রান্সভেস্টাইটস’ মানুষদের মধ্যেই এটি বেশি জনপ্রিয়। তারা শরীরের সব অংশকে আকর্ষণীয় রাখতে চায়।”

‘এটির প্রয়োজন নেই”

থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে যৌনাঙ্গ ফর্সা করার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এটি একেবারেই ‘অপ্রয়োজনীয়’।

তারা বলছে, এর ফলে শরীরে নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ব্যাথা, ফুলে যাওয়া এবং দাগ পড়া এমনকি বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার আশংকা আছে।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড: থোংচাই কিরাটিহুত্যাকর্ণ বলেছেন, লেজার দিয়ে পুরুষাঙ্গ ফর্সা করা অর্থের অপচয়ই শুধু নয়, এটি ভালো চেয়ে আপনার মন্দই বেশি করবে।”

‘বর্ণবাদী বিজ্ঞাপন’


গায়ের রঙ ফর্সা করার এই চেষ্টা গত কয়েক দশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক বেড়েছে। লেক্সাস হাসপাতাল বলছে, তাদের পঞ্চাশ শতাংশের বেশি রোগীই আসলে আসেন রঙ ফর্সা করতে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাদের গায়ের রঙ ফর্সা নয়, তাদের শ্রমজীবী শ্রেণী থেকে আসা মানুষ বলে গণ্য করা হয়। যাদের গায়ের রঙ ফর্সা তারা কখনোই ক্ষেতে কাজ করেনি, এমনটাই ভাবা হয়।

সেখানে বাজারে বহু ধরণের রঙ ফর্সা করার সামগ্রী পাওয়া যায় সেগুলোর বিজ্ঞাপন নিয়ে অতীতে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ব্যংককের একটি পাবলিক টয়লেটের ওপর এরকম একটি বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, “এই টয়লেট কেবল ফর্সা মানুষদের জন্য।”

একটি থাই কসমেটিক কোম্পানিকে তাদের রঙ ফর্সা করার একটি ক্রিমের বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে হয়েছিল এটির বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার পর। বিজ্ঞাপনে একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী দাবি করেছিলেন, এই ক্রিম ব্যবহারে তার গায়ের রঙ ফর্সা হয়েছে। এটিকে বর্ণবাদী বলে বর্ণনা করেছিলেন সমালোচকরা।

২০১৪ সালে মিস থাইল্যান্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যিনি জয়ী হয়েছিলেন, তার গায়ের রঙ কেন অন্যদের তুলনায় কালো তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে।

তবে থাই মডেল ননথোয়ান মায়েয়া থোংলেং তখন বলেছিলেন, যে মেয়েরা তাদের গায়ের রঙ নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন, তিনি চান তারা যেন এসব ঝেড়ে ফেলে আত্মবিশ্বাসী হন।

পাঠকের মতামত: